বিকেল হতেই আজকাল বাড়ির ছাদগুলোয় মানুষ দেখা যায়;নানা রকমের মানুষ-কেউ হনহনিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হাঁটছে,দুই বন্ধু ইট দিয়ে উইকেট বানিয়ে ক্রিকেট খেলছে,পাশাপাশি দু-বাড়ির কাকীমা-জেঠিমা বিছানার চাদর তুলতে তুলতে সুখদুঃখের বারোমাস্যা গেঁথে চলেছেন আবার ঠিক পাশের আবাসনের ছাদে এক অশীতিপর বৃদ্ধ কার্ণিশে দাঁড়িয়ে তার পুরু চশমার ওপার থেকে এই স্থবির শহরকে দেখছেন এক বিষন্ন দৃষ্টিতে! তার বিষন্নতায় হয়ত এই গৃহবন্দি দশা নতুন কোনো রঙ লাগাতে পারেনি;চার মাস আগেও রোজ বিকেলে তিনি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতেন ছাদে--নিস্তব্ধ,নিঃসঙ্গ! স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন প্রায় বছর ঘুরতে চলল। আগে ওনারা দুজন একসাথে ছাদে আসতেন; ভদ্রমহিলার আটপৌরে করে পরা হাল্কা রঙিন পেড়ে শাড়ির আঁচল মাথা থেকে বারবার খসে পড়ত উত্তুরে হাওয়ায়। কুঁকড়ে যাওয়া স্বামীর এক হাত ধরে ধীরে ধীরে হাঁটতেন আর হয়তবা পঞ্চাশ বছর আগের কোনো এক বসন্ত-সন্ধ্যার দাম্পত্য স্মৃতি উঁকি দিয়ে যেত...মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে অনেকদিন-হায়দরাবাদে পাকাপাকিভাবে বাস;ছেলে ফ্লরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে। দুবছরে একবার দেশে আসে বাবা-মাকে দেখতে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে বৃদ্ধের তিনতলার ফ্ল্যাটে দুবেলা দুজন পরিচারিকা এসে রান্না আর অন্যান্য কাজ করে চলে যায় পরিপাটি করে। মাসে একবার ভদ্রলোক পাড়ার স্টেট ব্যাঙ্কে যেতেন দুপুরের ফাঁকা সময়ে পেনশন তুলতে আর সন্ধ্যেবেলা ওয়াকিং স্টিক নিয়ে আবাসনের লাগোয়া একটা পার্কের ধারের বেঞ্চে বসতেন। কচিকাঁচাদের খেলা দেখতেন,পেরাম্বুলেটারে বেড়াতে আসা গোলগাল ছানাটিকে আদর করতেন। এখন উনি সারাদিন ঘরে শুয়ে টেলিভিশনে খবর দেখেন; হয়ত ঝাপসা চোখে সবটা ঠাওর করতে পারেন না কিন্তু মৃত্যুর পরিসংখ্যান শুনতে শুনতে একটু একটু করে অনতিক্রম্য দূরত্ব তৈরি হয় পড়ে থাকা অকিঞ্চিৎকর এক টুকরো জীবনের সাথে...একদা কানন দেবীর 'তুফান মেইল,ইয়ে দুনিয়া হ্যায় তুফান মেইল' শুনে যিনি জীবনের রূপ-রস-গন্ধ আহরণ করেছেন, গুরু দত্ত- ওয়াহিদা রহমানের রোম্যান্টিকতায় অবগাহন করেছেন আকণ্ঠ, সেই লোকটিই রোজ রাতে ঘুমের বড়ি খাওয়ার আগে টেবিল ঘড়ির কাটা পিছিয়ে দেন....এক ঘন্টা,দুঘন্টা,তিন ঘন্টা....অনন্তকাল!
কৌস্তভ
ছবি সৌজন্যঃ দ্য হিন্দু
#KaustavJoyGoswami
#Pratiksha
#LockdownHijibiji
No comments:
Post a Comment